বরিশাল মোকাম ইলিশ শূন্য, পাঙ্গাসসহ সয়লাব দেশীয় মাছে

সিটি নিউজ ডেস্ক:: ইলিশের দেশ বরিশালের মোকামে ইলিশ নেই। তবে নদী ও সাগরের অন্যান্য মাছে ভরপুর বরিশালের মোকাম। কিছু ইলিশ মোকামে এলেও দাম তুলনামূলক বেশি। বৃহস্পতিবার বরিশাল মোকামে এক কেজি সাইজের একটি ইলিশ পাইকারী বিক্রি হয়েছে ৬৭৫ টাকা কেজি দরে।

নদ-নদী, খাল-বিলের দেশীয় জাতের এবং সাগরের অন্যান্য মাছ প্রকার ভেদে পাইকরী প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে দেড়শ থেকে ৫০০ টাকা দরে। এর মধ্যে স্থানীয় বিভিন্ন নদী থেকে আহরিত পাঙ্গাস মাছ এসেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ। পাঙ্গাসগুলো সাইজেও বেশ বড়।আড়তদাররা বলছেন, মৌসুমের এই সময় সাধারণত নদীতে তেমন ইলিশ পাওয়া যায় না। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ৪ নভেম্বর সাগরে যাওয়া মাছ ধরা ট্রলারগুলো ফিরে এলে মোকামে ইলিশের সরবরাহ বাড়বে। তখন দামও কিছুটা কমবে আশা তাদের।

জুলাই-আগস্ট-সেপ্টেম্বর এই ৩ মাস ইলিশের প্রধান মৌসুম। এ সময় অভ্যন্তরীণ নদ-নদী এবং সাগরে প্রচুর ইলিশ আহরিত হয়। বছরের অন্যান্য সময়ও অভ্যন্তরীণ নদ-নদী এবং সাগরে কিছু ইলিশ ধরা পড়ে।

গত ১৪ অক্টোবর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগে নদী এবং সাগরে প্রচুর ইলিশ আহরিত হয়। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর নদীতে তেমন ইলিশ মিলছে না। নিষেধাজ্ঞার পর সাগরে যাওয়া ট্রলারগুলো ফিরে না আসায় বরিশালের পোর্ট রোডের মোকাম অনেকটা ইলিশ শূন্য।

ভরা মৌসুমে এই মোকামে প্রতিদিন ২ হাজার থেকে ৫ হাজার মন ইলিশ আসে। অথচ গত দুইদিনে এসেছে প্রায় ২০০ মন ইলিশ। বৃহস্পতিবার বরিশাল মোকামে রফতানিযোগ্য এলসি সাইজ (৬০০ থেকে ৯০০ গ্রাম) প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৬২৫ টাকা এবং কেজি সাইজের প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৬৭৫ টাকা কেজি দরে। এক কেজি ২০০ গ্রাম সাইজের প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকা দরে। 

মোকামে তেমন ইলিশ না থাকলেও নদ-নদী খাল-বিল-ঘের থেকে আহরিত দেশীয় প্রজাতীর বিভিন্ন মাছে ভরপুর পোর্ট রোডের মোকাম। সাগরের বিভিন্ন প্রজাতীর মাছও আছে প্রচুর। বিশেষ করে তেতুলিয়া ও চন্দ্রমোহন নদী থেকে আহরিত বড় বড় সাইজের পাঙ্গাস দৃষ্টি কাড়ছে ক্রেতাদের।

একেকটি পাঙ্গাসের ওজন ৩ থেকে ৭ কেজি পর্যন্ত। বড় সাইজের একটি পাঙ্গাস বৃহস্পতিবার প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে। নদ-নদীর দেশীয় পোয়া মাছ সাইজ ভেদে বিক্রি হয়েছে দেড়শ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে। আগের চেয়ে চিংড়ি মাছও সস্তা। বৃহস্পতিবার মাঝারী সাইজের চিংড়ি বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে।

মাছ ব্যবসায়ী মো. হারুন জানান, বৃহস্পতিবার মোকামে সামুদ্রিক জাভা কই ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, মোচন মাছ ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, ম্যাদ মাছ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, চিতল ১১০ থেকে ১২০ টাকা, কালো রঙের রূপচাঁদা ৩০০ থেকে ৪০০ এবং সাদা রঙের রূপচাঁদা ৬০০ থেকে সাড়ে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। 

বরিশাল জেলা মৎস্য আড়তদার মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ রিপন জানান, শীতের শুরুতে গ্রামগঞ্জে ঘের, পুকুর, ডোবা, খাল-বিল সেচ করে মাছ ধরার হিরিক পড়েছে। নদীতে ইলিশ না পাওয়া গেলেও জেলেদের জালে দেশীয় প্রজাতীর বিভিন্ন মাছ পাওয়া যাচ্ছে প্রচুর। এ কারণে দেশীয় মাছে ভরপুর মোকাম। এর মধ্যে চন্দমোহন নদী ও তেতুলিয়া নদীতে পাওয়া যাচ্ছে বড় বড় সাইজের পাঙ্গাস। নিষেধাজ্ঞা শেষে সমুদ্রে যাওয়া ট্রলারগুলো ফিরে এলে মোকামে ইলিশের সরবরাহ বাড়বে এবং তখন ইলিশসহ সব মাছের দাম আরও কমবে বলে তিনি জানান।

বরিশাল জেলা মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, নদীতে ডিম ছেড়ে ইলিশ সমুদ্রে চলে যায়। এই সময়ে নদ-নদীতে তেমন ইলিশ পাওয়া যায় না। তবে বাজারে অন্যান্য মাছের প্রচুর সরবরাহ আছে। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ইলিশের আরেকটি মৌসুম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin