বরিশালের নারীদের তৈরি পণ্য রপ্তানি হয় ২১ দেশে

সিটি নিউজ ডেস্ক ‍॥ বরিশালের আগৈলঝাড়ায় স্থানীয় নারীদের তৈরি পণ্য দেশের বাজার ছাড়িয়ে বর্তমানে রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ২১টি দেশে। ওইসব নারীর মধ্যে কেউ স্বামী পরিত্যক্তা কিংবা বিধবা। কেউবা সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম নারী। কারও আবার স্বামী আছেন, কিন্তু কর্মহীন। ফলে জীবনের তাগিদে তাদের নামতে হয়েছে কাজে। তাতে পেয়েছেন সফলতাও। পরিবার ও সমাজের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে হয়েছেন প্রশংসিত। অভাব তাড়িয়েছেন নিজ কর্মগুণে। সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতাও। উপজেলার কালুরপাড় এলাকার ‘বিবর্তন হ্যান্ডমেড পেপার প্রজেক্টে’ কাজ করা শতাধিক নারীর জীবনের গল্পটা এমনই।

পেপার প্রজেক্টে কর্মরত উৎপাদনকর্মীরা জানান, ডোবায় হজন্ম নেওয়া কচুরিপানা সংগ্রহ করে তা কেটে গাঁজন পদ্ধতিতে মন্ড তৈরি করা হয়। সেই মন্ড থেকে উৎপাদন করা হয় কাগজ। উৎপাদিত কাগজ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য বানান শ্রমিকরা। এছাড়া পাট দিয়েও কিছু পণ্য প্রস্তুত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, জার্মানি, ফ্রান্স, নরওয়েসহ ২১টি দেশে এসব পণ্য রপ্তানি হয়।

এখানে কর্মরত উৎপাদনকর্মী সুরলতা জানান, প্রতিবেশী একজনকে ধরে ‘বিবর্তনে’ কাজ নেওয়ার পর থেকে সচ্ছলতা এসেছে তার জীবনে। অপর নারী উৎপাদনকর্মী দুলু বিশ্বাস জানান, কাজের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বিভেদ করার সুযোগ নেই। সংসারের সুখ ও সমৃদ্ধির জন্য দু’জনকেই কাজ করতে হবে। অন্যথায় পিছিয়ে পড়তে হবে। এই নারী মনে করেন, পরবর্তী প্রজন্মের নারীদের উচিত সবকিছুকে তুচ্ছ করে এগিয়ে যাওয়া। নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ করা।

প্রোডাক্ট ও পেপার সেকশনের সুপারভাইজার নমিতা রায় জানান, ‘সামান্য কর্মী হিসেবে কাজে যুক্ত হয়ে পর্যাক্রমে এখন তিনি সুপারভাইজার পদে আসীন হয়েছেন। তার উপার্জিত অর্থে এক মেয়ে ও এক ছেলে স্নাতক শেষ করেছেন। কে কী বলল, তা কোনো কাজে আসবে না। আমাকে কেউ অধিকার পাইয়ে দেবে না। কাজের মাধ্যমে অধিকার আদায় করে নিতে হয়।’

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক অঞ্জন কুমার বিশ্বাস বলেন, এখানে যেসব নারী কাজ করেন, তাদের প্রত্যেকের জীবনে একেকটি ট্র্যাজেডি আছে। সেখান থেকেই মূলত ঘুরে দাঁড়াতে কাজে এসেছেন তারা। এখন তারা নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন। আমাদের প্রতিষ্ঠানের মূল চিন্তাই হচ্ছে গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়নে কাজ করা।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৫ সালে আগৈলঝাড়ায় কার্যক্রম শুরু করে বিবর্তন। সেখানে কর্মরত ১১১ জন কর্মীর মধ্যে ১০৬ জনই নারী। পুরুষ কর্মকর্তা মাত্র ৫ জন। ১০৬ জন নারীর মধ্যে আবার ৬ জন কর্মকর্তা। বাকি ১০০ জন প্রডিউসার বা উৎপাদনকর্মী, যাদের বেতন ৫ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin