কাজে যোগ না দিলে বলেছে চাকরি বাতিল

সিটি নিউজ ডেস্ক ‍॥ কলকারখানা খোলা রেখে লকডাউনের দরকার নাই। প্রশাসন রং-তামাশা শুরু করেছে। গরিব কীভাবে যাতায়াত করবে, সে সম্পর্কে সরকারের মোটেও মাথাব্যথা নাই। ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাওয়ার জন্য বরিশাল আসেন যাত্রী মেহেদী হাসান। তিনি আরও বলেন, করোনা দিয়া কী করব? ঘরে চাল নাই। কারখানায় না গেলে চাকরি থাকবে না। আমরা কি না খাইয়া মরুম?

মেহেদীর কথার সঙ্গে যোগ দেন ভান্ডারিয়ার বাসিন্দা সুজন। তিনি বলেন, গরিবের করোনা হয় না। যদি হইত, তাহলে আমাগো যাওয়ার জন্য অন্তত একটা ব্যবস্থা করে দিত। গাড়ি বন্ধ করে কারখানা খোলার কোনো মানে হয়?

শনিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে কথাগুলো বলছিলেন এ দুই ঢাকাগামী যাত্রী। মূলত লকডাউনের মধ্যেই উৎপাদন কারখানা চালু করার ঘোষণায় তারা চাকরি বাঁচাতেই ঢাকা পৌঁছানোর জন্য এত কষ্ট করছেন পথে পথে।

বরিশাল বিভাগের ছয়টি জেলাসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি জেলা থেকে কয়েক লাখ মানুষ সড়কপথে বিভিন্ন বাহনে কর্মস্থলমুখী যাত্রা করতে দেখা গেছে। এ সময় মানুষের জোয়ার তৈরি হয় সড়কে। খুব সকাল থেকে সড়কে মানুষের যাতায়াত তুলনামূলক কম থাকলেও দুপুরের পর তা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পায়। সড়কে ও নৌ-পথে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি না থাকায় রিকশা, ভ্যান, ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান, মোটরসাইকেলে করে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে।

সরেজমিনে নগরীর দুটি প্রবেশপথ রূপাতলী ও নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় লোকারণ্য দেখা গেছে। প্রতি ১০ মিনিটের ব্যবধানে এক একটি ট্রাক গাদাগাদি করে যাত্রী নিয়ে মাওয়া ও আরিচা ফেরিঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে যেতে দেখা গেছে। এ ছাড়া স্বল্পতম দূরত্বে রিকশা, ভ্যান ও থ্রি-হুইলারে করে মানুষ গন্তব্যে যেতে যাত্রা করেছে।

এ সময় প্রত্যক্ষদর্শী বাসশ্রমিক জহিরুল বলেন, সকালে কয়েকটি ট্রাক নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডের অদূরে যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে। তবে নথুল্লাবাদে ট্রাফিক পুলিশ সেই ট্রাক আটকে দিলে যাত্রীরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন। এর আধা ঘণ্টা পরে সড়কে আর কোনো পুলিশ দেখছি না। ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যানে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে।

অনেকে রূপাতলী থেকে কোনো পরিবহন না পেয়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন ঢাকায়। কথা হয় তেমনই একজন টেক্সটাইল শ্রমিক শরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমুয়া থেকে বরিশাল আসতে ৮০০ টাকা খরচ হয়েছে। এখন পকেটে আরও এক হাজার টাকার মতো আছে। ট্রাকে মাওয়া পর্যন্ত জনপ্রতি ৭০০ টাকা করে চাইছে। ট্রাকে গেলে মাওয়ার ওপারে উঠব কেমনে? আর আগামীকাল কারখানায় যোগ দেব কেমনে বুঝতে পারছি না। কারখানায় না গেলে চাকরি থাকবে না।

নথুল্লাবাদ ঘুরে দেখা গেছে, মাওয়া পর্যন্ত ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান বা পিকআপে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা ভাড়া আদায় করছে। মোটরসাইকেলে জনপ্রতি ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা। এ ছাড়া বরিশাল থেকে রামপট্টি পর্যন্ত থ্রি-হুইলারে ৭০ থেকে ১০০ এবং রিকশায় ১৫০ টাকা করে।

রাজাপুরের বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা থেকে এসেছি। কাল যদি কারখানায় কাজে যোগ না দিই, তাহলে আমার চাকরি থাকবে না। গতকাল কারখানা থেকে মোবাইলে জানিয়েছে, যদি কাজে যোগ না দিলে বলেছে চাকরি বাতিল। এ জন্য এত অমানুষিক কষ্ট করে হলেও এসেছি।

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা থেকে আসা আসাদুর রহমান বলেন, অনেক দূর থেকে ভোগান্তি পেয়ে এসেছি। সরকার যদি গাড়ি চলাচলের অনুমতি দিত, তাহলে আমাদের কষ্ট হতো না। পুলিশ প্রশাসন দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে আমাদের ঢাকায় পাঠাতে পারত সরকার। কিন্তু তা করেনি। এতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছি।

আরিফুর রহমান নামে আরেক যাত্রী বলেন, ছুটিতে আমরা এসেছি। কিন্তু যাওয়ার সময়ে কোনো গাড়ি নাই। শ্রমিকদের কারখানা খুলে দেবেন আর যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেবেন না, তাহলে কেমনে হয়! এভাবে গাড়ি বন্ধ রেখে কারখানা খুলে লকডাউন কার্যকর করার কোনো মানে নেই। এটা আরও বিপজ্জনক। আগে জানাল ৫ তারিখ পর্যন্ত লকডাউন। কিন্তু গতকাল সিদ্ধান্ত জানাল ১ তারিখ শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে হবে। এটা কোনো সিস্টেম না।

ভান্ডারিয়া থেকে হেঁটে আসা যাত্রী নাসির গাজী বলেন, লকডাউন না তুলে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত মোটেই যৌক্তিক না। শ্রমিকদের অর্থকষ্ট দুটোই গেছে। করোনার ভয়ও বাড়ছে। এর চেয়ে শ্রমিকদের যাওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল।
এ বিষয়ে বরিশাল বাস মালিক সমিতির নেতাদের এবং মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে দায়িত্বশীলদের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, করোনা প্রতিরোধে সরকার ঘোষিত লকডাউন চলছে। ঈদ-পরবর্তী এই লকডাউনের আজ ছিল সপ্তম দিন।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin