চিকিৎসকদের বারণ থাকায় এতদিন বরিশালে আসিনি: প্রতিমন্ত্রী জাহিদ

বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের পক্ষে লাগানো ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণকে কেন্দ্র করে গত ১৮ আগস্ট রাতে ঘটে যায় তুলকালাম। ওই ঘটনায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে যায় জেলা, বিভাগীয় ও পুলিশ প্রশাসন। কিন্তু প্রতিমন্ত্রীকে এতদিন দেখা যায়নি। ওই রাতের ঘটনা নিয়ে কোনো মন্তব্যও করেননি। ১০ দিন পর নগরীতে পৌঁছে তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ ছিলাম। চিকিৎসকদের বারণ থাকায় এতদিন বরিশালে আসিনি।’

শনিবার রাত ৯টার দিকে সড়কপথে বরিশালে পৌঁছান জাহিদ ফারুক শামীম। তার আগমন উপলক্ষে অনুসারী নেতাকর্মীরা নগরী থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে উজিরপুরের ইচলাদী থেকে শুরু করে নগরীর প্রবেশপথ গড়িয়ারপাড়, নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজসহ বিভিন্ন পয়েন্টে শুভেচ্ছা জানান।

রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় তিনি সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের গিলাতলী গ্রামে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের মধ্যে সেলাই মেশিন বিতরণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে প্রায় ১৫ মিনিট বক্তৃতা করলেও ১৮ আগস্ট রাতের ঘটনা নিয়ে কোনো কথা বলেননি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউএনও মুনিবুর রহমান।

অন্যদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ আনিসুর রহমান, তিনজন সিটি কাউন্সিলর ও সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ওই সেলাই মেশিন বিতরণ করেন।

অনুষ্ঠানে ১৮ আগস্ট রাতের ঘটনা নিয়ে প্রতিমন্ত্রী নীরব থাকলেও ক্ষুব্ধ কণ্ঠে কথা বলেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আনিচ। জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমি এবং ইউএনও এখানে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিত্ব করি। আমাদের ভদ্রতা-নমনীয়তাকে কেউ দুর্বলতা মনে করবেন না। আমরাও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ করে দলের জন্য কাজ করেছি। এখন প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা হিসেবে দেশের জন্য কাজ করছি।’

সদর উপজেলার ইউএনও মো. মুনিবুর রহমান ঘটনার আগেই ১০ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক উপস্থিত সবার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা চাইলে ইউএনও মুনিবুর এখানেই থাকবেন।’ এ সময় সবাই হাত তুলে সমর্থন জানান।

আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আনিচ বলেন, বরিশালের রাজনীতি এখন সন্ত্রাসনির্ভর হওয়ায় আমি স্বেচ্ছায় রাজনীতি থেকে দূরে আছি। প্রতিমন্ত্রীর শান্তিপূর্ণ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে থেকে তিনি আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চান।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে ব্যানার-ফেস্টুন লাগিয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রীর অনুসারীরা। সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী নেতাকর্মীরা সিটি করপোরেশনের কর্মী পরিচয়ে সেগুলো অপসারণ করতে গেলে প্রথম আনসার সদস্যরা এবং পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমান বাধা দেন। এতে ক্ষুব্ধ মেয়র অনুসারীরা ইউএনওর সরকারি বাসভবনে হামলা করেন। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন। ওই ঘটনায় মেয়রকে প্রধান আসামি করে দুটি মামলা করেন ইউএনও এবং পুলিশ। ২২ আগস্ট রাতে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল হাসান বাদলের সরকারি বাসভবনে প্রশাসন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে সমঝোতা হলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে এসব মামলায় এক সিটি কাউন্সিলরসহ মহানগর আওয়ামী লীগের ১২ নেতাকর্মী এখনও কারাগারে রয়েছেন।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin