স্কুল ছাত্রীর সন্তান নিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন এক শিক্ষক

সিটি নিউজ ডেস্ক:: মাত্র দুই থেকে তিন মাস বয়সী মেয়েশিশুকে নিয়ে ক্লাস নিচ্ছেন এক শিক্ষক। দেখে মনে হচ্ছে নিজ সন্তানকে এমন পরম যত্নে আগলে পাঠদান করছেন তিনি। ওই শিক্ষকের পাঠদানের একটি ছবি রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শিশুকে কোলে নিয়ে পড়াচ্ছিলেন পঙ্কজ মধু নামের ওই শিক্ষক। চিনাইর আঞ্জুমান আরা উচ্চ বিদ্যালয়ে রোববার সকাল ১০টার দিকে ছবিটি তোলা হয়।

পঙ্কজ মধুর বাড়ি গোপালগঞ্জে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দাতিয়ারা পৌর এলাকায় থেকে শিক্ষকতা করেন।

পঙ্কজ মধুর কোলের শিশুটি ২০২১ সালে দশম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক ছাত্রীর সন্তান। করোনাভাইরাসের পর স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় ওই ছাত্রীর বিয়ে হয়। এক বছর পর তার কোলজুড়ে আসে একটি মেয়ে সন্তান।

আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর শিক্ষক পঙ্কজ মধু জানতে পারেন, দশম শ্রেণির ওই ছাত্রী স্কুলে আসেনি। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তার বিয়ে হয়ে গেছে। তিনি ব্যবস্থা নেন ওই ছাত্রীকে স্কুলে আনার।

রোববার সকালে সেই ছাত্রী স্কুলে আসে। কিন্তু পাঠে মনোযোগ দিতে পারছিল না তার কোলে থাকা সন্তানের জন্য। বিষয়টি দেখে পঙ্কজ নিজেই শিশুকে কোলে নিয়ে পড়ান শুরু করেন।

এ বিষয়ে পঙ্কজ মধু বলেন, ‘কখন যে ছবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে তা আমার জানা নাই। আর ভাইরাল হওয়ার জন্যও আমি এই কাজটা করিনি। ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা আমি সবসময়ই চিন্তা করি।’

২১ বছর ধরে শিক্ষকতা করা এ শিক্ষক আরও বলেন, ‘আমি যখন জানতে পারলাম করোনার সময় স্কুল বন্ধ থাকায় দশম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে, তখন আমি তার সাথে যোগাযোগ করলাম। রোববার সে তার স্বামী ও সন্তানকে নিয়ে স্কুলে আসে।

‘আমি তার স্বামীকে বোঝাই পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। তখন সেই শিক্ষার্থী তার কোলের শিশুকে নিয়ে এসে কক্ষে বসে। কিন্তু কোলের সন্তানটির জন্য সে ভালো করে মনোযোগ দিতে পারছিল না। তাই আমি বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে ক্লাস করাচ্ছিলাম।’

চিনাইর আঞ্জুমান আরা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ইমরুল হাসনাত চৌধুরী সৈকত বলেন, ‘ঘটনাটি আজ সকালের। সেই স্কুলের একজন শিক্ষক বিষয়টি আমাকে জানায়। তারপর ফেসবুকে ছবিটি আমি পোস্ট করি। শিক্ষার্থীদের প্রতি পঙ্কজ স্যার অনেক দায়িত্ববান।’

এ বিষয়ে চিনাইর আঞ্জুমান আরা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশাররফ হোসেন বলেন, পঙ্কজ মধু শিক্ষক হিসেবে খুবই আন্তরিক। শিক্ষার্থীদের প্রতি তিনি খুবই দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘পঙ্কজ মধু ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজি পড়ান। পুরো বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মুখে তার খ্যাতি। তিনি শিক্ষার্থীদের ভালবাসেন।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin