দীর্ঘ ৭ মাস পর করোনায় মৃত্যু দশের নিচে

সিটি নিউজ ডেস্ক :: দেশে গত দেড় বছরের বেশি সময় ধরে চলা প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। এ ধারাবাহিকতায় সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের দুঃসময় পেরিয়ে আসা দেশে সাত মাস পর প্রথমবার ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যা দশের নিচে এসেছে।

পাশাপাশি টানা ১৭ দিন ধরে রোগী শনাক্ত ৫ শতাংশের নিচে রয়েছে। যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কিন্তু এ নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, পরিস্থিতি যতই নিয়ন্ত্রণে থাকুক, সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, ঘনঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া অথবা হ্যান্ডসেনিটাইজার ব্যবহার করে হাত জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।

পাশাপাশি নির্ধারিত বয়সিদের দুই ডোজ টিয়া নেওয়া বাধ্যতামূলক। অন্যথায় দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসার শঙ্কা থাকবেই।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৭ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ ১১ মার্চ এর চেয়ে কম মৃত্যুর তথ্য এসেছিল।

সেদিন ৬ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শুক্রবার বিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত করোনাবিষয়ক নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে গত সাত মাসে দৈনিক মৃত্যু কখনও ১০ জনের নিচে নামেনি। বরং করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের দাপটের মধ্যে জুলাই মাসে দৈনিক মৃত্যু দুশ’র ঘর ছাড়িয়ে যায়।

এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশ থেকে ২৩ হাজার ২০৪টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর যাচাই-বাছাই শেষে আগের জমা কিছু স্যাম্পলসহ মোট ২৩ হাজার ৩০২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। সর্বশেষ নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ৬৪৫ জন রোগী শনাক্ত হয়।

জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, দেশের মানুষের করোনা টিকা আওতায় আসতে থাকা, স্বাস্থ্য সচেতনতা, করোনার চিকিৎসা পরিধি বাড়ায় সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে।

এটা ভালো দিক। তবে কোনোভাবেই আত্মতৃপ্তিতে ভোগা যাবে না। কারণ ভাইরাসটির তৃতীয় এমনকি চতুর্থ ঢেউও আসতে পারে। এজন্য সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং দ্রুত পূর্ণ ডোজ টিকা নিতে হবে। ভবিষ্যতে যেন তৃতীয় বা চতুর্থ ঢেউ না আসে সে ব্যাপারে এখন থেকেই সবাইকে প্রস্তুতি নিয়ে চলতে হবে।

ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলি যুগান্তরকে বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে যাচ্ছে। এতে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই। কেননা, বিশ্বের অনেক দেশে এখনো সংক্রমণ ৫ শতাংশের উপরে আছে।

বাংলাদেশে এখনো অনেকে টিকা পায়নি। স্কুল-কলেজ সব খুলে দেওয়া হয়েছে। সব ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চলছে। তাই এসব বাস্তবতা বিবেচনায় বলা যায়, দেশের ভেতরে ও বাইরের উৎস থেকে যে ফের সংক্রমণ উর্ধ্বমুখী হবে না-সেটা নিশ্চিত হওয়ার সুযোগ নেই।

তাই এই মুহূর্তে জরুরি হচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে কড়াকড়ি শুরুর দিকের মতোই রাখতে হবে। হাসপাতাল, ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রস্তুত রাখতে হবে। ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব না হলে ঝুঁকি হ্রাসের সম্ভাবনা কম। তাই যত দ্রুত সম্ভব কমপক্ষে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হবে।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়ার্ল্ডওমিটার নিয়মিত তথ্য পর্যালোচনা করে। সংস্থাটির দেওয়া তথ্য মতে চলতি বছরের মে মাসে দেশে করোনায় মারা যান ১ হাজার ১৬৯ জন।

ওই মাসে রোগী শনাক্ত হয় ৪১ হাজার ৪০৮ জন। জুনে মারা যান ১ হাজার ৮৮৪, শনাক্ত হয় ১ লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জন।

এরপর জুলাইয়ে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ১৮২ মারা যান, রোগী শনাক্ত হয় ৩ লাখ ৩৬ হাজার ২২৬ জন। আগস্টে মারা যান ৫ হাজার ৫১০ জন, শনাক্ত হয় ২ লাখ ৫১ হাজার ১৩৪ জন।

সেপ্টেম্বরে মারা যান ১ হাজার ২৪৪ জন, শনাক্ত হয় ৫৫ হাজার ২৯০ জন। এছাড়া চলতি অক্টোবরের ৮ দিনে মারা গেছেন ১৪৪ জন এবং ৪ হাজার ৯৪৪ রোগী শনাক্ত হয়েছে।

দেশে গত কিছুদিন ধরে সংক্রমণের হার কমার সঙ্গে সঙ্গে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও কমছে। সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৬১ হাজার ৪৬৩ জনে। তাদের মধ্যে ২৭ হাজার ৬৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে গত একদিনে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ হয়েছে, যা আগের দিন ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ ছিল। গত দেড় বছরে মোট নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্ত ১৫ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

পাশাপাশি মৃত্যু ১ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আর সুস্থ হয়েছেন ৯৭ দশমিক ৫১ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, গত একদিনে শুধু ঢাকা বিভাগেই ৪৫৯ জন শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের ৭১ শতাংশের বেশি।

গত একদিনে যে ৭ জন মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৩ জন ঢাকা, ৩ জন চট্টগ্রাম এবং একজন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা। তবে বাকি পাঁচ বিভাগ অর্থাৎ রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহ থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন কারও মৃত্যুর খবর আসেনি।

গত একদিনে যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ৩ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ২ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ এবং ২ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ছিল।

তাদের মধ্যে ৬ জন সরকারি হাসপাতালে এবং একজন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তাদের ৩ জন ছিলেন পুরুষ, আর ৪ জন নারী। দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় ১৭ হাজার ৭৩৩ পুরুষ ও ৯ হাজার ৯২১ জন নারী করোনায় মারা গেছেন।

দেশে গত বছরের ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রথম রোগী ধরা পড়ে। চলতি বছরের ৩১ আগস্ট তা ১৫ লাখ পেরিয়ে যায়। এর আগে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে গত ২৮ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৬ হাজার ২৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়।

প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চলতি বছর ১৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যু সংখ্যা ২৭ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এছাড়া চলতি বছরের ৫ আগস্ট ও ১০ আগস্ট ২৬৪ জন করে মৃত্যু খবর আসে, যা মহামারির মধ্যে একদিনের সর্বোচ্চ সংখ্যা।

Share on facebook
Share on twitter
Share on linkedin